বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি : আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২৯ ডিসেম্বর ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় একটি পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়নে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থীরা ও তাদের সমর্থকরা ভোটারের হাতে হাত রেখে করমর্দনেও গতি বাড়ছে। প্রার্থীরা সেকেন্ড-মিনিটকেও দাম দিচ্ছেন শেষ সময়ে। দেখাচ্ছেন স্বপ্ন, ওড়াচ্ছেন প্রতিশ্রুতির ফানুস; দিচ্ছেন ওয়াদা। যেখানে সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসনে (বোয়ালমারী-মধুখালী-আলফাডাঙ্গা) আলফাডাঙ্গার মানুষ আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কায় ৯০ ভাগ ভোট দেন। প্রবাদেই রয়েছে মধুখালী ও বোয়ালমারীতে সমান সমান হলেও আলফাডাঙ্গার ভোটে নৌকার প্রার্থী জয়ী হয়। স্বাধীনতার পর থেকে সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হয়। সেখানে স্থানীয় পৌরসভা-ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী বিদ্রোহীদের কারণে কঠিন চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তবে নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন আলফাডাঙ্গার মানুষ মুখে যাই বলুক সিল মারার সময় নৌকার বিপক্ষে সিল মারবে না! গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় প্রচার-প্রচারণার শেষ সময় ছিল।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে রয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগ ঘরোনার। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. সাইফুর রহমান সাইফার গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়েই আলফাডাঙ্গা পৌরসভা সৃষ্টিলগ্নের প্রথম মেয়র হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। সাইফারের আপন চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আর তিনি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং চাচাতো ভাই এনায়েত হোসেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (জগ) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচিত দুইবারের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আহাদুল হাসান, মেয়র পদে অপর দুই প্রাঅর্থী মো. আলী আকসাদ ঝন্টু (নারিকেল গাছ) ও মুন্সী মাহাবুব (মোবাইল ফোন) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। ঝন্টু স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ঝন্টু আওয়ামী লীগের সাংসদের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত হলেও তার পরিবার পূর্বে বিএনপি ঘরোনার বলে জানা গেছে। পৌরসভায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৪জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়ন বুড়াইচ ও গোপালপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। বিদ্রোহীদের মধ্যে বুড়াইচ ও গোপালপুরে সাবেক চেয়ারম্যানরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবার দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও প্রতিটি ইউনিয়নে রয়েছে কমবেশি বিএনপির ঘরানার ভোট। বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বিদ্রোহী চাপে বেকায়দায় আছে নৌকার প্রার্থীরা। এ উপজেলায় সংসদ নির্বাচনে ৯০ ভাগ ভোট আওয়ামী লীগকে দিলেও স্থানীয় নির্বাচনে ব্যক্তি কেন্দ্রীক ভোট দিবেন ভোটাররা। কোন কোন জায়গায় নৌকা ও বিদ্রোহী সমর্থকদের মধ্যে চলছে টান টান উত্তেজনা। এরই মধ্যে বুড়াইচ ইউনিয়নে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ উপজেলায় সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শংকা কেউ প্রকাশ না করলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। আওয়ামী লীগের দূর্গ হওয়ায় সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
গোপালপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ৩ জন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম (চশমা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপালি পারভীন (আনারস)। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় তিনজন প্রার্থীর মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা এ ইউনিয়নে। ইউনিয়নটিতে সাধারণ সদস্য পদে ৩০জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৫ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সোহরাব হোসেন বুলবুল (নৌকা) স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুজ্জামান মাসুদ মাস্টার (চশমা), আব্দুর রাজ্জাক (মোটরসাইকেল), আশিকুর রহমান (আনারস) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী শেখ সোবহান (হাতপাখা)। এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ৩০জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ইউনিয়নের সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় এখানে ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন নৌকা, চশমা ও মোটরসাইকেল প্রতীক।
বুড়াইচ ইউনিয়নে ৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীম মোল্লা, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে মাঠে আছেন যুবলীগ নেতা আহ্সান উদৌল্লা রানা (চশমা), স্বতন্ত্র বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম (মোটরসাইকেল), সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব পান্নু (আনারস), মো. তোকাম্মেল হোসেন (টেবিল ফ্যান) ও আবু মুসা (টেলিফোন)। এ ইউনিয়নে সাধারণ সদস্য পদে ৩৩জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায় এই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের বিপরীতে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানে আছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী চশমা প্রতীকের প্রার্থী আহসান উদৌল্লা রানা ও সাবেক চেয়ারম্যান আনারসের প্রার্থী আব্দুল ওহাব পান্নু। উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় নৌকার প্রার্থীরা চাপে আছে। সবাই মিলে কাজ না করলে নৌকাকে জয়ী করা কঠিন হবে। তবে শেষ পর্যন্ত নৌকা প্রতীক দেখলে মাথা ঠিক থাকে না আলফাডাঙ্গার মানুষের। তবে এরমধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ নেতাকর্মীরা দিনের বেলায় নৌকায় চড়ে সূর্য ডোবার পর রাতের বেলায় বিদ্রোহীদের গাড়ে চড়ছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম আকরাম হোসেন বলেন, সংসদ নির্বাচনে আলফাডাঙ্গার ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়। আলফাডাঙ্গাবাসী নৌকা পাগল। নৌকা দেখলে মাথা ঠিক থাকে না! তবে স্থানীয় নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কারণে নৌকার প্রার্থীরা বেকায়দায় আছেন। সবাই আওয়ামী লীগ। একজন নৌকা পাইছে বাকিসব বিদ্রোহী হয়ে নৌকাকে ঠকানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। তবে আমি আশাবাদী নেতাকর্মীরা ভেদাভেদ ভুলে সিল মারার সময় নৌকা মার্কায় সিল মারবে। আলফাডাঙ্গা পৌরসভা ও সদর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরাই বিজয়ী হবে।
ফরিদপুর সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে শুধু পৌরসভাই ৯টি কেন্দ্রে ৯জন ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রসঙ্গত, আগামী ২৯ ডিসেম্বর আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় ১৩ হাজার ৮৪৯, আলফাডাঙ্গা সদর ইউপিতে ৭ হাজার ৫৫১, বুড়াইচ ইউপিতে ১৬ হাজার ২৭১ ও গোপালপুর ইউপিতে ১৩ হাজার ৮৪৮ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।